শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬

আমার বাণী


To spend a life together, conversation has to be meaningful; but silence also needs to be tolerable.

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না


এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না এই বিস্তীর্ন শ্মশান আমার দেশ না এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না ……(এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না – কবি নবারুন ভট্টাচার্য) Loose translation by me This valley of death is not my land I do not live in these bloody sand This is a victory stand of murderers Do not call it my place, From this bloody abattoir of innocents I must reclaim my space I must have my land back, be it tomorrow or today Even in my death, my rage will find a way... I shall spread in every blood & vein In every women & men... Let them come to stop my wrath, I shall move mountain & earth. To make this a country of my love, I can take a thousand birth.

বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১২

আশি হাজার

কেউ যদি এখন আমার হাতব্যাগটা খোলে, দেখবে ওতে আশি হাজার টাকা আছে! কড়কড়ে হাজারের নোটে নগদ আশি হাজারটা টাকা এখন আমার হাতব্যাগে দোল খাচ্ছে!
আমার এখন আলিবাবার অবস্থা হয়েছে, কোথাও গিয়ে যে মনের সুখে টাকাগুলোর গায়ে ১টু হাত দোব; সেটি হচ্ছে না! হোস্টেলে ফিরে লোকের সামনে তো আর এত দিস্তে দিস্তে টাকা বের করা যায় না!
লোকে বলে- কিছু পেতে নাকি কিছু দিতে হয়! তবে এত টাকা পেতে আমায় খুব বেশি টাকা লাগাতে হয়নি! ৮০০ টাকা লাগিয়ে ৮০,০০০ তুলেছি! নিজের এলেমে নিজেই নিজের পিঠ চাবড়ে দিলাম।
কিন্তু টাকাটা রাখি কোথায়? ব্যাঙ্কে রাখলে ট্যাঁপায় ধরবে, ব্যাগে রাখলে প্রশ্ন উঠবে আর বাড়িতে রাখলে মা কি বলবে?
খুব গরম লাগছে, মুম্বাইতে ঠা ঠা রোদ্দুর হয় না বটে; তবে যা হয়, গা ঘামিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট! ১টা পেপসি খাব নাকি, রোদে শুকিয়ে গলাটা চুলকুচ্ছে!! খাইই না, ৮০টা হাজার টাকা তো আছে পকেটে; চিন্তা কি? ট্রেন থেকে নেমে রাস্তা ধরলাম!
ছোট্ট ফুটপাথের দোকান, এখানে সবার সামনে টাকা বের করা কি ঠিক হবে? কেউ যদি দেখে ফ্যালে? দেখে যদি পেছু নেয়? দূর! আর যেতে পারছি না! সন্তর্পণে ব্যাগের চোরা পকেটে হাত ঢুকিয়ে ১টা হাজারী নোট তুলে আনলুম! পেপসি চাইতেই দোকানদার বল্ল- 'চেঞ্জ দিজিয়েগা ম্যাডাম, ছুট্টা নেহি হ্যায়'! সর্বাঙ্গ জ্বলে গ্যালো! টাকা হাতে মণ্ডা খেতে চাইলেও অ্যাতো ঝ্যামেলা! খুব ১টা কড়া গালি দিতে গিয়েও মিঠে হেসে বললাম- 'নেহি হ্যায় ভাইসাব, বড়ি পিয়াস লাগি হ্যায়! দেখিয়ে না, হোতা হ্যায় তো...' লোকটা ১গাল 'হায় হায়' করে আমার দিকে ঠাণ্ডায় জমজমে ১টা পেপসি ধরিয়ে দিল!
আঃ! এর নাম তেষ্টা, আর এইই হল তেষ্টার শান্তি! ১গাদা খুচরো বাজেয়াপ্ত করে হাঁটা লাগালাম! এবার কি করি?
৮০ টা হাজার টাকা আছে ব্যাগে, কিছুই কি খচ্চা করবনি?? কি কিনি, কি কিনি করছি। এমন সময়ে পথ আটকে দাঁড়াল ১টা ভিখিরি, কোলে আবার ১টা বাচ্চা! এসেই নাকি সুরে ভিক্ষার বাঁধা বোল ধরল! শুনেই মাথায় ১টা রসিকতা খেলে গ্যালো! কেউ ২ঘণ্টায় ১০হাজার কামায়, আর কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ১ই সুরে ১ই ভাবে ২টো টাকার জন্য ঝুলোঝুলি করে! আচ্ছা, আমি কি বদলে দিতে পারিনা ওর ভাগ্য, আজকের মত? আজকের মত আমি কি ওর ভগবান হতে পারি না? ইদিক-সেদিক ইতি-উতি তাকিয়ে আবার তুলে আনলাম ১টা হাজারের নোট, জুলজুল চোখে সেটা পাচার করে দিলুম ভিখিরি ঠাকরুন-এর হাতে! ভিখিরিটা কি বুঝল কে জানে, বোকা বোকা চোখে নোট-টা টেনে নিয়ে ছুট লাগালে নুতুন ভিখ-দেউনি'র খোঁজে! আঃ মোলো যা! দুনিয়াটা কি বদখত হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন! ১টা থ্যাঙ্ক ইউ অব্দি বললে না! ধ্যাত্তেরি!

সামনে অটো দেখতে পে উঠে পড়লাম! অটোওয়ালা ব্যাস্ত হাতে মিটার নামিয়ে বল্ল- 'কিধার যানে কা'? এই রেঃ! এই জায়গাটাই তো চিনিনে!মুখ রাখতে অটোওয়ালা-র চোখে চোখ রেখে বললাম- 'ইধার কোই মল হ্যায় কেয়া'? অটোওয়ালা বল্ল- 'হ্যায় না ম্যাডাম'। আমি আর সুযোগ দিলাম না, 'তো চলিয়ে' বলে আরাম করে বসলাম! অটোওয়ালা চললে অটো চাগিয়ে! বেশ ভাল জায়গাটা! শুনেছি, মুম্বাইতে নাকি টাকা ওড়ে আকাশে-বাতাসে! চিরকাল সেই উড়ন্ত টাকাগুলো-কে ধরার স্বপ্ন দেখেছি! আর আজ ওগুলোকে ধরতে পেরে মন চাইছে অমনি করে আমিও টাকা উড়িয়ে দেই! কারন- এখন, আমিও পারি!
মল এসে গ্যালো, নেমে অটোওয়ালা-কে আরেকটা হাজারের নোট ধরিয়ে দিলাম! হাজারের নোট পে অটোওয়ালা বেশ খুসিই হল, ব্যাটাচ্ছেলে-র কাছে বেশি খুচরা হয়েছে বোধয়! যাক গে! দেয়ার পর খেয়াল হল, আরে আমার কাছে তো ভাঙ্গানি ছিলই! যাক গে!
মল-টা খুব ১টা বড় নয়, তবে শপারস স্টপ আছে! আমার জন্য যথেষ্ট! কিন্তু বেশি খচ্চা করা যাবে না! টাকা জমাতে হবে এবার; হোস্টেলে আর থাকব না, নুতুন বাড়িভাড়া নেব ১টা! নিজের মত থাকব! মনে মনে খরচটা ছকে নিয়ে ঢুকে পড়লাম! সারি সারি জামাকাপড়, সুগন্ধি- যাদের দিকে অ্যাদ্দিন শুধু তাকিয়ে থেকেছি! ১টা সুগন্ধি কেনা যায় না, রইস হওয়ার জন্যই তো করছি এসব! কিনিই না! ৮০হাজার তো কামিয়েছি এই ২দিনে! কিনে ফেললাম ডেভিডফ-এর 'কুল ওয়াটার', অবশ্যই মেয়েদেরটা! খুব ১টা খসল না যদিও, এইই২০০০ টাকা মত। আমার কাছে সেটা এখন এমন বেশি কিছু নয়!
বেরিয়েই সত্য পল-এর দোকান! কোনদিন চোখ তুলেও এসবে নজর দেব ভাবিনি! কিন্তু আজ? এখন? আমি ৮০হাজারের মালকিন! আচ্ছা, কত দাম হবে সত্য পল-এর স্কার্ফ-এর? ৮০হাজারেরও বেশি হবে কি?? ১বুক সাহস নিয়ে ঢুকে পড়লাম, লক্ষ্য করলাম ৩জন মহিলা দৌড়ে এলেন মাল দ্যাখাতে! উঃ! স্কার্ফের কি বাহার! কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনি? ভেবেচিন্তে ১টা পছন্দ করলাম! পকেটে যে ভালরকম ১টা ফোস্কা পড়ল, বুঝে গেলাম! কি আর করা?
এবার কি করি? আচ্ছা, এখানে ১টা বিজলি গ্রিল আছে না? কতদিন ভাল বাঙ্গালী রান্না খাইনি! ঢুকে পড়লাম বিজলি গ্রিলে, দারোয়ান-টা ১টু তাকাল কি? এটা হল রইস বাঙ্গালিদের খাওয়ার আড্ডা! লক্ষ্য করলাম, এরা কেউই বাংলা বলছে না! আমি অবশ্য বসেই হাভাতের মত বললাম- 'ডাব চিংড়ি আছে?' আমার বাংলা শুনে আশপাশের বাঙ্গালী গুলো ঘুরে তাকাল! আমি ওদের তাকানি-কে ফুতকারিয়ে দিয়ে বেয়ারা-কে বললাম- 'লিখুন, ডাব চিংড়ি-চিতল পেটি আর সাদা ভাত! আর মিষ্টি কি আছে?' অর্ডার দিয়ে বসে বসে নিজের ভাগ্যের কথাটা ভাবছিলুম! পাতি মধ্যবিত্তের মে আমি, সোম থেকে শনি মাছ খেয়েছি, রোববারে মুরগি আর মাসে ১দিন পাঁঠা! আর আজ? আমি এখন ১কিলো পাঁঠার চেয়েও বেশি দামে ১৫০গ্রাম ডাব চিংড়ি কিনি, বিজলি গ্রিল থেকে! খুব মুরগি করেছি ঐ মধ্যবিত্ত মানসিকতাকে!
কত কিছু চেয়েছি জীবনের কাছে; ছোট ছোট স্বপ্ন, ছোট ছোট সুখ। সুখ-এর যাতনা মেটাতে গোপন অসুখ! ১টা ভিডিও ক্যামেরার খুব শখ ছিল আমার, যেমনি করে ঐ বিলু (বিলিতি)রা ১টা ছোট কাঁধব্যাগ নিয়ে শহর ঘুরে ঘুরে ক্যামে জীবন তোলে, সেইরকম! আর নিজের ১টা ছোট্ট বাসা; নিজের মতন, রাত্রি-যাপন! আর ১টা টাটা ন্যানো! লোকে যতই বলুক- 'আমরা ন্যানো কিনব ক্যানো?' আমার কিন্তু খুব পছন্দ। ক্যানো? বিন-এর গাড়ি বলে। মিস্টার বিন, তারও তো এরকম ছোট বাড়ি-ছোট গাড়ি! নিজের মতন, একলা জীবন! অমন আমার হয় না?
ভাবতে ভাবতে খাওয়ার এসে গ্যালো! খুব খিদে পেয়েছিল, ফুড়ুৎ করে উড়ে গ্যালো!
রাস্তায় বেড়িয়ে মনে হলো, মায়ের জন্য কোনদিনও কিছু ত্যামন...
ছোটবেলায় আমি মায়ের শাড়ি গুনতাম। ১টা-২টো-৩টে-৪টে-২০০টা! মাকে বলতাম- 'ও মা! তোমার তো অনেক শাড়ি'! মা হাসত, তফাৎ-টা সেদিন বুঝলাম যেদিন মামীর আলমারিটা দেখলাম!
মায়ের জন্য ১টা শাড়ি কিনে ফেললাম! আচ্ছা, ৮০হাজার টাকা যখন কামালামই, ১টা হ্যান্ডিক্যাম কিনে ফেলাটা কি ঠিক হবে না? কে জানে আবার কবে এমন টাকা হবে? দৌড়ে মলে ঢুকলাম! তারপর ১ ছুটে ই-জোন! দামী বাহারি ১টা হ্যান্ডিক্যাম কিনলাম! এতগুলো টাকা নগদে দিতে দেখে লোকটা অবাক চোখে তাকাল! হ্যান্ডিক্যাম নিয়ে পথে নেমে সে কি আনন্দ! আচ্ছা, হ্যান্ডিক্যাম-টা কি বের করব? ঐ বিলুদের মত শহরটাকে ধরব নাকি ক্যামেরার চোখ দিয়ে? না বাপু! লজ্জা করে! বাড়ি গিয়ে আগে সব বুঝেসুজে নিই, তারপর না হয়...
এত মাল নিয়ে ট্রেনে যাওয়া ঠিক নয় বাবা! ট্যাক্সি ডাকি, না না রেডিও ক্যাব! ক্যাবে উঠে দম নিলাম, ক্যাব উড়ে চলেছে মুম্বাইএর রাজপথ ধরে, আর চড়চড় করে মিটারের কাঁটাও নড়ে চলেছে! সে যাক গে, ২দিনে ৮০,০০০ টাকা কামানো মেয়ের এটুকু বিলাস সাজে! এরপর থেকে তো আমি শুধু রেডিও ক্যাবই চড়ব! কি কি কিনেছি, আরেকবার বরং নেড়েচেড়ে দেখি! এই স্কার্ফ-টা গলায় দিয়ে স্কার্ট-এর সাজে যখন ডেভিডফ লাগিয়ে যাব, আমায় দেখে কি 'ওপরওয়ালা'-দের চোখ পিছলোবে না? অফিসের ঐ চকচকে ছেলেটা, ও কি আমায় প্রপোজ করবে?
বাড়ির কাছে ক্যাব থামিয়ে গুপ্ত ধনের খোঁজে ব্যাগে হাত ঢোকাতেই মাথাটা বন করে ঘুরে গ্যালো! আর ১টাও হাজারের নোট নেই, এদিকে মানিব্যাগে টিমটিম করছে দেড়শ-টা টাকা! হায় ভগবান! দামী মল-সত্য পল পেরিয়ে এসে ট্যাক্সিআলার কাছে ভরাডুবি? কিন্তু কোথায় গ্যালো বাকি টাকাগুলো? একে একে মনে পড়ে গ্যালো খচ্চার লিস্টি! কিন্তু এখন কি করি, টাকা কই পাই? এ-টি-এম নিয়ে যাব নাকি? তাইই যাই! এ-টি-এম থেকে টাকা মিটিয়ে মনে পড়ল পেপসি খাওয়ার বাকি খুচরো-টা পকেটেই ছিল!

আবার আবার শুন্য আমি, ফেরত টু পাতি মধ্যবিত্ত! ভাবতেই পারছি না ২দিনের কামানো ৮০হাজার আমি ১দিনেই! কিন্তু ক্যানো ক্যানো পাতি মধ্যবিত্ত আমি? পাতি মধ্যবিত্তের কি অ্যাতো আগুন থাকে? ১টা পাতি মধ্যবিত্ত মেয়ে কি পারে 'ছেলেধরা' হয়ে উঠতে, মেয়েলিয়ানা ভাঙ্গিয়ে খেতে?
ভাবতেই মনে জোর এল। সত্যিই তো, ভয়টা আমার কিসের? সামনের শনিবার, আরও ৮০হাজার!

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১২

"আমাদের সব চে বড় ভয় এটা নয় যে আমরা পারি না; আমাদের সব চে বড় ভয় এইখানে যে আমরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শক্তি ধরি! হ্যাঁ, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি!" "আমি তোমায় দেখিয়ে দোব আমি কত বড়! আমি অ্যাতো বড় যে, কালকে রাত্রে আমি ১ টা পাথরের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছি; কয়েকটা ঢিল-কে খুন করেছি, আর ১ টা থান ইট-কে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি! হ্যাঁ, আমি এত বড় যে 'পদার্থ'-কে ১ নিমেষে করে দেই 'অ-পদার্থ'!" "আমি জানি, এই বাচ্চা-টা ১দিন এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হবে! ও এমন ১ টা 'কেউ' হবে, যার থেকে বড় আর কখনো দ্যাখেনি 'কেউ'!" "কিন্তু কোথাও ১ টা গিয়ে এই ছবিটাই পাল্টে গ্যালো যখন তুমি আর তুমি থাকলে না! তুমি লোককে সুযোগ করে দিলে তোমার চোখের উপর আঙ্গুল তুলে বলার, যে তুমি কিস্যু নও। কেন জানো? কারন যখনই সামনে বাধা এসেছে, তুমি পালিয়ে বেঁচেছ; দোষারোপ করার লোক খুঁজেছ। শোনো তোমায় ১ টা কথা বলি, এই জীবন-টা কোন রঙ্গিন স্বর্গ নয়! জীবন-টা আসলে সাদা-কালো ১টা লড়াইয়ের ময়দান। এখানে তোমায় লড়তে হবে। গায়ে যতই জোর থাক না কেন; লড়তে যদি না জানো, এই জীবন তোমার ঠ্যাং ভেঙ্গে সারাটা জীবন তোমাকে বিছানায় শুইয়ে রেখে দেবে। তুমি কোনদিনও কিস্যু হবে না! বাঁচতে গেলে লড়তে হবে। কিন্তু ব্যাপারটা শুধু এটা নয় যে তুমি কতটা মার দিতে পারো, ব্যাপারটা এইখানে যে তুমি কতটা মার নিতে পারো! কতটা মার খেতে পারো; আর সেটা খাওয়ার পরেও আবার, বারবার উঠে দাঁড়াতে পারো! এইভাবেই তো আসে প্রতিদিনের জয়। জীবনটা তো ১ টা যুদ্ধক্ষেত্র। জীবনে কোথাও পৌঁছুতে গেলে, পৌঁছুতে হবে যুদ্ধ করেই। তোমার জীবন কেমন হবে, সেটা তো তুমি ঠিক করবে; আর সেটা যদি অন্য কেউ ঠিক করে দ্যায়, তাহলে সে জীবন 'তোমার' কি করে হয়? তুমি শুধু তোমার স্বপ্নের সাথে কথা বলো, আর ছিনিয়ে আনো তোমার স্বপ্ন সফল করার অধিকার। যদি তুমি জানো, কোথায় যেতে চাও; যাও, স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাও। কিন্তু তার আগে, সাহস করে গালটা বাড়িয়ে দাও। জীবন কিন্তু তোমাকে মার দেবে, প্রচণ্ড মার; আমার প্রশ্ন হল, তুমি পাল্টা দিতে পারবে কি? আর তা যদি না পারো; কক্ষনো কিন্তু বলো না যে এর জন্য, ওর জন্য কিম্বা তার জন্য তোমার কিছু হল না!! তোমার জীবনে যদি কিছু না হয়ে থাকে, সেটা স্রেফ তোমার নিজের জন্য; এইটুকুনির ক্ষমতা অন্ততঃ তোমার আছে।" "আমাদের সব চে বড় ভয় এটা নয় যে আমরা পারি না; আমাদের সব চে বড় ভয় এইখানে যে আমরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শক্তি ধরি! আমাদের ভেতরের অক্ষমতা নয়, ভেতরের অসীম ক্ষমতাটাকে নিয়েই আমাদের যত ভয়! প্রত্যেকটা মানবশিশুর মধ্যেই ক্ষমতা আছে বড় হওয়ার; হ্যাঁ কারুর কারুর নয়, আমাদের সবার মধ্যেই বড় হবার সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। যখন আমরা আমাদের ভেতরের ক্ষমতাটার ব্যাভার করা শুরু করি, আরও অনেক মানুষ সেটা দেখে সাহস পায় ভেতরের ভয়টাকে জয় করার। কারন, আমাদের সব চে বড় ভয় হল- আমরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শক্তি ধরি " !"আমি জানি তোমরা সবাই বড় হতে পারো, কিন্তু আমি তোমাদের দেখিয়ে দোব আমি কত বড় হতে পারি!!!!!"


http://www.youtube.com/watch?v=0KHrQ3uhnxI

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

পেঁপে-র ঝোল

তোমার ফোন ধরতে আর ভাল্লাগে না মা! ভাল্লাগে না আর তোমায় ফোন করতে!! মুম্বাই এসে আমি ভেসে গেছি!! জানো, এখন আমি কবিতা পড়ি না; গল্প ভাবি না। আকাশের তারা গুনি না, রাস্তার পসরার দিকে ফিরেও তাকাই না! ভাতের হোটেল থেকে শেষ কবে খেয়েছি মনেও পড়ে না এখন আমার!
এখন কে-এফ-সি আর ম্যাকডোনাল্ড-রা আমায় হাত বাড়িয়ে ডাকে, আমার গলা অব্দি গোঁ ঠেসে আমি আমার নতুন কেনা ভাগু-র গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকি!!
পেপসি খেতে খেতে গলা পুড়ে গেছে আমার, বাংলা সিনেমা দেখে এখন আমার আর প্রেম পায় না! আসলে মা তো একটা উপরে ওঠার সিঁড়ি কেবল, অসুখে পড়লে মাথায় হাত বোলানোর জন্য 'বাড়ির লোক'! তুমি কি জানো মা, আমার অফিসের মেডিকেল ইন্সিওরেন্স ঠিক কত টাকার? অসুখে পড়লে 'বাড়ির লোক' আর ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা 'মায়ের কোল'-এ আর দরকার নেই আমার! কেন বলো তো?? সম্পর্কে যে অনেক মলম লাগাতে হয়, অত মলম লাগানোর মন আর নেই! 'অ-সামাজিক' হওয়া মানে এখন ফেসবুকে না থাকা; তুমি অ-সামাজিক মা!
তুমি আমার হাত ধরে শপারস স্টপে হাঁটতে পারবে মা? তোমার ক্লান্ত শাড়ি-টা শপারস স্টপের স্মার্টনেসে অবাধ্য শিবলিঙ্গের মত চোখে লাগে! আর তোমারই বা ইচ্ছে কোথায় বলো সুয়োরানী সাজার? দুয়োরানীর প্রতিই তো বাঙ্গালীর যত সেন্টিমেন্ট!!
জানো তো, আমার প্রিয় মাছ-ভাত এখন জাপানি মেনুর 'সুশি'!! তুমি 'সুশি' জানো মা? জাপানিয়া ভাত-মাছ বলতে পারো! আমার জিভে লাগে, জানো?
আচ্ছা, তুমি কি এখনো সেই রোজ রোজ আলু সিদ্ধ-ভাত খাও বিকেল বিকেল করে?? আর তার সাথে মাসি-র রেঁধে দেয়া সেই পেঁপের ঝোল? তোমার মনে আছে, আমি কখনো ওটা খেতে চাইতাম না! তুমি জোর করে খাওয়াতে! আমার ঘেন্নায় পিত্তি পড়ত! যখন প্রথম দোসা খাইয়েছিলে, মনে আছে, আমি খেতে চাইনি! আমি নিতে পারিনি জানো? ছোট ছিলাম কিনা... যখন বড় হলাম, কত্ত খেয়েছি! আর অসুবিধা লাগেনি, বরং তোমারই এখন অসুবিধা হয়! তুমি বুড়িয়ে যাচ্ছ মা, কিম্বা জোয়ান তুমি কোনদিনও ছিলে না। শেষ কবে ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগিয়েছো, মনে পড়ছে?
আজ সবদিক দিয়ে মনে হয়, তুমি ব্যর্থ; বড় ব্যর্থ মা! আমি কিন্তু অনেক বড় হয়েছি, অনেক বড়র!শুধু যদি কখনো বাড়ি যাই, কখনো ভাল না লাগা সেই সাদামাঠা পেঁপের ঝোল-টা আরেকবার রাঁধবে মা?

শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১

হ্যালো! আমি বাঙ্গালী বলছি।

পড়ে পাওয়া চাকরি এইচ-এস-বি-সি'র। ৩ খানা মাস মাগনায় মাইনে তুলে, প্রেত্থম দিন কল নিতে বসেছি। আজ থেকে মধুমাস খতম, চালু ৮ ঘণ্টা কল তোলা; আর মিরিকিনিদের গলাবাজি গলাধঃকরণ করা!
কাঁটায় কাঁটায় ৮ টায় কম্পিউটারে লগ ইন হল, আধ ঘণ্টা কেটে গেল। কোন কল নেই, কাজেই বসে বসে পাড়াপড়শি -দের সাথে ৫০০ গ্যাজাচ্ছি! আর কি নাম বললে মিরিকিনিরা ঠিকঠাক বুঝতে পারবে, এই নিয়ে জোর বাতেল্লা করছি! এমন সময়ে, নাকি সুরে ফোনের গুঁতো!
এক ধাক্কায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে- "থ্যাঙ্ক ইউ ফর কলিং এইচ-এস-বি-সি কার্ড সার্ভিসেস, মাই নেম ইজ শ্রী; হাউ মে আই হেল্প ইউ?"
- "ইয়েস ম্যাডাম, আই ওয়ান্ট টু নো মাই ব্যালেন্স প্লিজ!"
ভদ্রলোকের নাম সাদিক ইসলাম, নাম- টা আবার তুর্কি কায়দায় ল্যাখা; তবে ইংরিজি উচ্চারণ শুনে মনে হল পাকিস্তানি-টাকিস্তানি হবে। যাক গে! কিন্তু এখন ব্যালেন্স -টা দেখি কি করে? কাজেই সুরে সুরে সাত্যকি দা- কে স্মরন করলাম! সাত্যকি দা আমাদের ট্রেনার, এই প্রসেসে প্রচুর জ্ঞান!
সাত্যকি দা -কে দেখেই- "আরে, ব্যালেন্স -টা কোত্থেকে দ্যাখে, বলো তো..."
সাত্যকি দা দেখিয়ে দিতেই- "ইয়েস মিস্টার ইসলাম, থ্যাঙ্ক ইউ ফর ইয়োর পেশেন্স..."
হঠাৎ আমায় থামিয়ে দিয়ে - "অ! আপনি বাঙ্গালী, আরে আমিও। আমি ঢাকার, আপনে কলকাতার। কেমন? ঠিক ধরছি কিনা বলেন?"
আমি থ-দ-ধ হয়ে কাস্টমার-এর এই রহস্যময় উত্থানের কারন খুজছি, এম্নি সময় চোখে পড়ল...
সাত্যকি মুনির সাথে বাংলালাপের সময় মিউট টেপা হয়নি! এদিকে কাস্টমারের সাথে তো 'সেটি' করা বারন! আরে কি মুশকিল! প্রথম দিনই বাংলা বলে চাকরি -টা খোয়াবো নাকি?
কাজেই চট করে মিউট মেরেই আবার, -"সাত্যকি দা-আ-আ-আ..."
সাত্যকি দা অতি কুল-কাল লোক, তাই ছেলে-পুলেরা নাম রেখেছে 'জয় মামা'!
তা 'জয় মামা' এসেই মুশকিল আসান করে দিলেন। বললেন- "আরে, বাংলা শুনে ফেলেছে তো কি হয়েছে? বলে দে যে আসামী।"
প্রতিবাদের গন্ধ পেতেই আবার বললেন- "মাল-টা চাইছে কি? ব্যালেন্স তো? দিয়ে বিদেয় কর না।"
কাজেই আমি ফেরত গিয়ে স্মার্টলি - "ইয়েস মিস্টার ইসলাম, ইওর ব্যালেন্স ইজ..."
ভদ্রলোক আবার আমাকে মাঝপথে আটকে- "ও, বাংলা বলা বারণ, না? এদিকে আপনার সাথে কথা বলানোর জন্য আমি আমার স্ত্রী -কে ডেকে আনলাম। আইচ্ছা, ভাল থাকেন।"
ফোন -টা ধপাস করে নামিয়ে রাখলেন ভদ্রলোক। আর আমিও হাঁফ ছেড়ে দম নিলাম!
এক নিঃশ্বাস দম নিয়ে মনে পড়ল, এইবারের বার মিউট টেপাই ছিল!

অনশন মানে হাপিস!

একরাশ পেট খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। দুরন্ত -তে চেপে, চুপচাপ বার্থে মুখ লুকিয়ে বসে আছি... প্রকৃতির ডাকাডাকি -তে সাড়া দেওয়ার ভয়ে স্রেফ উপোস দেবার ধান্দা করছি। আর দুরন্ত'র ' লোকাল লোক' রা ঘন ঘন খাবার- দাবার এনে আমার আন্না হাজারিয়ানায় ঘুণ ধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে!
কি বিপদ! হ্যাংলা বাঙ্গালী কিনা, কাজেই মাগনা খাবারের লোভে দুরন্তয় টিকিট! এদিকে পেট বাবাজি ভারত বনধ ডেকেছেন! আবার জিভেও জলের কান্না! অতএব আমার বিপদের উপর আপদ!!
ধুর ছাই! চাপব ট্রেনে, ভাত খাব না; তাই কখনো হয়?
মন থেকে হ্যাংলামি তাড়াতে বাথরুমের দিকে এগুলাম, ভারতীয় রেলের বাথরুমে গেলে অনেকক্ষণ খিদের কথা মনে পড়ে না। ফিরে সিটে বসতেই কার মোবাইলে ঢং ঢং করে ১২ টার অ্যালার্ম বাজল!
বাইরে জানলার দিকে মন দেব, এম্নি সময়ে খুব জোরে- 'কে বুলা দি? হ্যাঁ গো, আমাদের খুব খাইয়েছে! জানো তো, প্রথমেই তো জলখাবার দিয়ে গেল। স্যান্ডুইচ, শিঙ্গাড়া, আর একটা বড় সাইজের শোনপাপড়ি; তারপর এল ফ্রুটি আর চা! ও ব্বাবা! তার এক ঘন্টা পরেই এল স্যুপ আর কিসের একটা লাঠি! ভাবো, ২ ঘণ্টার মধ্যেই রাতের খাবার দিল! আর সে কত খাবার! আমি তো খেয়ে শেষই করতে পারছি না। ভাত-রুটি- ডাল -মাংস- স্যালাড- মিষ্টি... এই সবে খেয়ে উঠলুম... ও ব্বাবা! দাঁড়াও দাঁড়াও... ঐ দ্যাখো আবার আইস ক্রিম আসছে!..."

আমি আর থাকতে পারলাম না। জোর হেঁকে বেয়ারা -কে রাতের খাবার দিতে বললাম। আর সকালে জলখাবার -টা যে আমার আমিষ হবে, সেটাও জানিয়ে দিলাম!