শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১

হ্যালো! আমি বাঙ্গালী বলছি।

পড়ে পাওয়া চাকরি এইচ-এস-বি-সি'র। ৩ খানা মাস মাগনায় মাইনে তুলে, প্রেত্থম দিন কল নিতে বসেছি। আজ থেকে মধুমাস খতম, চালু ৮ ঘণ্টা কল তোলা; আর মিরিকিনিদের গলাবাজি গলাধঃকরণ করা!
কাঁটায় কাঁটায় ৮ টায় কম্পিউটারে লগ ইন হল, আধ ঘণ্টা কেটে গেল। কোন কল নেই, কাজেই বসে বসে পাড়াপড়শি -দের সাথে ৫০০ গ্যাজাচ্ছি! আর কি নাম বললে মিরিকিনিরা ঠিকঠাক বুঝতে পারবে, এই নিয়ে জোর বাতেল্লা করছি! এমন সময়ে, নাকি সুরে ফোনের গুঁতো!
এক ধাক্কায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে- "থ্যাঙ্ক ইউ ফর কলিং এইচ-এস-বি-সি কার্ড সার্ভিসেস, মাই নেম ইজ শ্রী; হাউ মে আই হেল্প ইউ?"
- "ইয়েস ম্যাডাম, আই ওয়ান্ট টু নো মাই ব্যালেন্স প্লিজ!"
ভদ্রলোকের নাম সাদিক ইসলাম, নাম- টা আবার তুর্কি কায়দায় ল্যাখা; তবে ইংরিজি উচ্চারণ শুনে মনে হল পাকিস্তানি-টাকিস্তানি হবে। যাক গে! কিন্তু এখন ব্যালেন্স -টা দেখি কি করে? কাজেই সুরে সুরে সাত্যকি দা- কে স্মরন করলাম! সাত্যকি দা আমাদের ট্রেনার, এই প্রসেসে প্রচুর জ্ঞান!
সাত্যকি দা -কে দেখেই- "আরে, ব্যালেন্স -টা কোত্থেকে দ্যাখে, বলো তো..."
সাত্যকি দা দেখিয়ে দিতেই- "ইয়েস মিস্টার ইসলাম, থ্যাঙ্ক ইউ ফর ইয়োর পেশেন্স..."
হঠাৎ আমায় থামিয়ে দিয়ে - "অ! আপনি বাঙ্গালী, আরে আমিও। আমি ঢাকার, আপনে কলকাতার। কেমন? ঠিক ধরছি কিনা বলেন?"
আমি থ-দ-ধ হয়ে কাস্টমার-এর এই রহস্যময় উত্থানের কারন খুজছি, এম্নি সময় চোখে পড়ল...
সাত্যকি মুনির সাথে বাংলালাপের সময় মিউট টেপা হয়নি! এদিকে কাস্টমারের সাথে তো 'সেটি' করা বারন! আরে কি মুশকিল! প্রথম দিনই বাংলা বলে চাকরি -টা খোয়াবো নাকি?
কাজেই চট করে মিউট মেরেই আবার, -"সাত্যকি দা-আ-আ-আ..."
সাত্যকি দা অতি কুল-কাল লোক, তাই ছেলে-পুলেরা নাম রেখেছে 'জয় মামা'!
তা 'জয় মামা' এসেই মুশকিল আসান করে দিলেন। বললেন- "আরে, বাংলা শুনে ফেলেছে তো কি হয়েছে? বলে দে যে আসামী।"
প্রতিবাদের গন্ধ পেতেই আবার বললেন- "মাল-টা চাইছে কি? ব্যালেন্স তো? দিয়ে বিদেয় কর না।"
কাজেই আমি ফেরত গিয়ে স্মার্টলি - "ইয়েস মিস্টার ইসলাম, ইওর ব্যালেন্স ইজ..."
ভদ্রলোক আবার আমাকে মাঝপথে আটকে- "ও, বাংলা বলা বারণ, না? এদিকে আপনার সাথে কথা বলানোর জন্য আমি আমার স্ত্রী -কে ডেকে আনলাম। আইচ্ছা, ভাল থাকেন।"
ফোন -টা ধপাস করে নামিয়ে রাখলেন ভদ্রলোক। আর আমিও হাঁফ ছেড়ে দম নিলাম!
এক নিঃশ্বাস দম নিয়ে মনে পড়ল, এইবারের বার মিউট টেপাই ছিল!

অনশন মানে হাপিস!

একরাশ পেট খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। দুরন্ত -তে চেপে, চুপচাপ বার্থে মুখ লুকিয়ে বসে আছি... প্রকৃতির ডাকাডাকি -তে সাড়া দেওয়ার ভয়ে স্রেফ উপোস দেবার ধান্দা করছি। আর দুরন্ত'র ' লোকাল লোক' রা ঘন ঘন খাবার- দাবার এনে আমার আন্না হাজারিয়ানায় ঘুণ ধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে!
কি বিপদ! হ্যাংলা বাঙ্গালী কিনা, কাজেই মাগনা খাবারের লোভে দুরন্তয় টিকিট! এদিকে পেট বাবাজি ভারত বনধ ডেকেছেন! আবার জিভেও জলের কান্না! অতএব আমার বিপদের উপর আপদ!!
ধুর ছাই! চাপব ট্রেনে, ভাত খাব না; তাই কখনো হয়?
মন থেকে হ্যাংলামি তাড়াতে বাথরুমের দিকে এগুলাম, ভারতীয় রেলের বাথরুমে গেলে অনেকক্ষণ খিদের কথা মনে পড়ে না। ফিরে সিটে বসতেই কার মোবাইলে ঢং ঢং করে ১২ টার অ্যালার্ম বাজল!
বাইরে জানলার দিকে মন দেব, এম্নি সময়ে খুব জোরে- 'কে বুলা দি? হ্যাঁ গো, আমাদের খুব খাইয়েছে! জানো তো, প্রথমেই তো জলখাবার দিয়ে গেল। স্যান্ডুইচ, শিঙ্গাড়া, আর একটা বড় সাইজের শোনপাপড়ি; তারপর এল ফ্রুটি আর চা! ও ব্বাবা! তার এক ঘন্টা পরেই এল স্যুপ আর কিসের একটা লাঠি! ভাবো, ২ ঘণ্টার মধ্যেই রাতের খাবার দিল! আর সে কত খাবার! আমি তো খেয়ে শেষই করতে পারছি না। ভাত-রুটি- ডাল -মাংস- স্যালাড- মিষ্টি... এই সবে খেয়ে উঠলুম... ও ব্বাবা! দাঁড়াও দাঁড়াও... ঐ দ্যাখো আবার আইস ক্রিম আসছে!..."

আমি আর থাকতে পারলাম না। জোর হেঁকে বেয়ারা -কে রাতের খাবার দিতে বললাম। আর সকালে জলখাবার -টা যে আমার আমিষ হবে, সেটাও জানিয়ে দিলাম!

তু সারু ছে...

আর ইউ ব্রিটিশ?
শুনে চমকা খেলাম... আমেরিকানের কাছে ব্রিটিশ উপাধি পাওয়া মানে প্যাঁক খাওয়া। কাজ করি কল সেন্টারে... মিরিকিনি চরিয়েই রোজের জোগাড় হয়।
আবার প্রশ্নঃ 'আর ইউ ব্রিটিশ'??
শুনে আমার 'হ্যা-না-মানে' অবস্থা। তাই এক পোঁচ বেশি আঁত মেরে বললাম- 'নো স্যার, ইন্ডিয়ান'!
-'ওঃ, ওকে। সো দ্যাট উড মেক ইউ আ মোসলেম! রাইট?'
এমন অদ্ভুত দাবীতে মুখ দিয়ে পুট করে 'ইয়ে' বেরিয়ে গেল। হাসি চিবিয়ে বললাম- 'নো স্যার, হিন্দু'!
যেন ভুল শুনছেন, এমনভাবে উড়িয়ে দিয়ে ভদ্রলোক জিগালেন- 'ডু ইউ নো জুড়াটি'??
এবার আমার চুল ছেঁড়ার অবস্থা! 'জুড়াটি' আবার কি বস্তু রে ভাই?
আবার হা-গবাটের মত বললাম- 'আয়্যাম আফ্রেড, নো স্যার'!
ভদ্রলোক এক পশলা হেসে বললেন- 'আই উড হ্যাভ টোল্ড ইউ, টু সারু চে (তু সারু ছে); হুইচ মিনস ইউ আর নাইস।'
এবার আমার ব্যোমকানোর পালা! বলে কি?? এ তো গুজরাটি বলছে। ও হরি! এই তাহলে 'জুড়াটি'!
আমি ফিচকে হেসে, নিখুঁত কল সেন্টারি কায়দায় বললাম- 'থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, মাই প্লেজার...'!!