সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

পেঁপে-র ঝোল

তোমার ফোন ধরতে আর ভাল্লাগে না মা! ভাল্লাগে না আর তোমায় ফোন করতে!! মুম্বাই এসে আমি ভেসে গেছি!! জানো, এখন আমি কবিতা পড়ি না; গল্প ভাবি না। আকাশের তারা গুনি না, রাস্তার পসরার দিকে ফিরেও তাকাই না! ভাতের হোটেল থেকে শেষ কবে খেয়েছি মনেও পড়ে না এখন আমার!
এখন কে-এফ-সি আর ম্যাকডোনাল্ড-রা আমায় হাত বাড়িয়ে ডাকে, আমার গলা অব্দি গোঁ ঠেসে আমি আমার নতুন কেনা ভাগু-র গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকি!!
পেপসি খেতে খেতে গলা পুড়ে গেছে আমার, বাংলা সিনেমা দেখে এখন আমার আর প্রেম পায় না! আসলে মা তো একটা উপরে ওঠার সিঁড়ি কেবল, অসুখে পড়লে মাথায় হাত বোলানোর জন্য 'বাড়ির লোক'! তুমি কি জানো মা, আমার অফিসের মেডিকেল ইন্সিওরেন্স ঠিক কত টাকার? অসুখে পড়লে 'বাড়ির লোক' আর ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা 'মায়ের কোল'-এ আর দরকার নেই আমার! কেন বলো তো?? সম্পর্কে যে অনেক মলম লাগাতে হয়, অত মলম লাগানোর মন আর নেই! 'অ-সামাজিক' হওয়া মানে এখন ফেসবুকে না থাকা; তুমি অ-সামাজিক মা!
তুমি আমার হাত ধরে শপারস স্টপে হাঁটতে পারবে মা? তোমার ক্লান্ত শাড়ি-টা শপারস স্টপের স্মার্টনেসে অবাধ্য শিবলিঙ্গের মত চোখে লাগে! আর তোমারই বা ইচ্ছে কোথায় বলো সুয়োরানী সাজার? দুয়োরানীর প্রতিই তো বাঙ্গালীর যত সেন্টিমেন্ট!!
জানো তো, আমার প্রিয় মাছ-ভাত এখন জাপানি মেনুর 'সুশি'!! তুমি 'সুশি' জানো মা? জাপানিয়া ভাত-মাছ বলতে পারো! আমার জিভে লাগে, জানো?
আচ্ছা, তুমি কি এখনো সেই রোজ রোজ আলু সিদ্ধ-ভাত খাও বিকেল বিকেল করে?? আর তার সাথে মাসি-র রেঁধে দেয়া সেই পেঁপের ঝোল? তোমার মনে আছে, আমি কখনো ওটা খেতে চাইতাম না! তুমি জোর করে খাওয়াতে! আমার ঘেন্নায় পিত্তি পড়ত! যখন প্রথম দোসা খাইয়েছিলে, মনে আছে, আমি খেতে চাইনি! আমি নিতে পারিনি জানো? ছোট ছিলাম কিনা... যখন বড় হলাম, কত্ত খেয়েছি! আর অসুবিধা লাগেনি, বরং তোমারই এখন অসুবিধা হয়! তুমি বুড়িয়ে যাচ্ছ মা, কিম্বা জোয়ান তুমি কোনদিনও ছিলে না। শেষ কবে ঠোঁটে লিপিস্টিক লাগিয়েছো, মনে পড়ছে?
আজ সবদিক দিয়ে মনে হয়, তুমি ব্যর্থ; বড় ব্যর্থ মা! আমি কিন্তু অনেক বড় হয়েছি, অনেক বড়র!শুধু যদি কখনো বাড়ি যাই, কখনো ভাল না লাগা সেই সাদামাঠা পেঁপের ঝোল-টা আরেকবার রাঁধবে মা?